অন্য মায়েরা কেমন হয় তা সত্যিকারে আমি জানি না,
আমার মা'কে আমি সবটুকু জানি,
দীর্ঘ আঠারো বছর পেরিয়ে গেছে বাবা বিদেশে ছিলেন,
সংসারে একটু সচ্ছলতার জন্যে তিনি বউ ও
সন্তানদের ভালোবাসাকে তুচ্ছ করে দূরে পড়ে ছিলেন,
এর মাঝে তিন চারবার হয়তো তিন মাস করে ছূটি নিয়ে দেশে
এসেছিলেন, তার সঠিক হিসেব আমার মনে নেই ।
এতোটা বছর পেরিয়ে গেলেও মা কখনো বাবাকে রাগে
কিছু বলেননি যে, আর কতকাল এভাবে থাকবো ?
কখনো মন খারাপ করে খানা দানা বন্ধ করেন নি
অথবা বাপের বাড়ি চলে যাওয়ার ভয় দেখান নি ।
আমরা শুধু দুই ভাই
মাধ্যমিক পাস করার পর আমি ঢাকায় চলে যাই,
তার তিন বছর পর আমার ছোট ভাইও চলে যায় ।
আর মা বাড়িতে একদম একা থাকতেন
একা কী খান না খান তিনিই জানতেন।
আমি সকালে বিকেলে ফোন করে জানতে চাইতাম,
মা, দুপুরে কী রেধেছিলেন ? রাতে কী খাবেন ?
মা হেসে বলেন, কী খাবো বাজান, যা খাই সবই বদহজম হয়,
পেটের বামপাশে শক্ত হয়ে থাকে, কোমরের ব্যাথাটা আবার বেড়েছে ।
আমি বলি, তাহলে আগামী শুক্রবার দিন টাঙ্গাইল যান !
মা বলেন, গেলেই তো হাজার দুয়েক টাকা লাগবে ।
আমি বলি, টাকার জন্য চিন্তা করবেন না,
অনেক তো করেছেন, এখন আমরা কী কিছূই করব না ?
তুই কবে আসবি বাজান ?
এই তো গত সপ্তাহে না বাড়ি থেকে এলাম ।
ভুলেই গেছি, মনে হয় কতদিন দেখিনা ।
আমার চোখদ্বয় জলে ভরে যায় ।
সত্যিকার ভালোবাসার মানে কিন্তু সব সময় কাছে থাকা নয়,
দূর থেকেও গভীর ভাবে ভালোবাসা যায়,
এমনটা আমি মায়ের মাঝে বাবার প্রতি দেখেছি ।
ক’দিন হল বাবা দেশে এসেছেন, বাবার শরীরটা বিষণ রকম রোগা,
তাছাড়া কিছুদিন আগে বিদেশে থাকা অবস্থায় বাবা হার্ট এটা্ক করেছিলেন।
সৃষ্টিকর্তার কাছে লাখো শুকরিয়া, বাবাকে কাছে পেয়েছি।
আমি মাকে বলেছি বাবা যেন কোন কাজ না করেন,
অনেক করেছেন, এখন বাকি জীবন দোয়া কালাম করে যাক।
২০-০২-২০১২
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন