ডিম ও মুরগি । Dim O Murghi । Eggs and Chickens । বাংলা গল্প

                                                              
কবি ও কবিতা
      
     দোকাদারের কাছে এক হালি ডিম কিনতে গেছে ফজলুল হক ওরফে ফজু। বয়স ছয় কি সাত হবে। মুখে কোন গোফ দাড়ির বালাই নেই। নাপিতের কাছে গিয়ে মাঝে মাঝে চাচা  ডাক দিয়ে বলে, একটু এই দিকে টান দিয়ে দেওয়া যায় বেস্নড দিয়ে?
    নাপিত সাহেব ফজুর দিকে তাঁকিয়ে থেকে বলেন, বয়স কত হল তোমার?
    বয়সের সাথে গোফ দাড়িতে ব্লেড ধরার কী সম্পর্ক আছে?
    কোন কথায়ই যখন কাজ হয় না তখন একটু দূরেই দেখতে পায় তার বাপ আসছে নাপিতকে চুল কাটার বিল দিতে। ফজু চুপ করে বলে, ঠিক আছে ভালো করে চুল কাটেন। ওসব কথা এখন বাদ।
    নখ কাটার কথা বলে অন্য দোকানদারের কাছ থেকে একটা ব্লেড কিনে নিয়ে বাড়িতে বাথরুমে ঢুকে গোফ দাড়ি কাটতে থাকে। দু-টান না দিতেই উহ্‌ বলে মৃদূ চিৎকার করে।
    বাহির থেকে ওর মা বলেন, কিরে ফজু ভিতরে কি করছিস?
    না মা কিছু হয়নি। পিঁপড়ায় কামড় দিয়েছে।
    তুই বুঝি ওখানে গিয়ে গুড় খাচ্ছিস? গুড়ের প্রতি পিঁপড়ার বেশী আর্কষণ থাকে।
    মা চুপ থেকে অন্য কাজে চলে যান। বাথরুমে থেকে বের হয়ে আসে ফজু। গোফের এক দিকে কাটা দাগ। রক্ত বের হচ্ছে। খাওয়ার সময় মা বলেন, ওখানে বুঝি পিঁপড়ায় কামড় দিয়েছে রে?
    ফজু মাথা নাড়ে, হ্যাঁ।
    দোকানদার চারটা ডিম দিলেন। ডিম নিয়ে ফজু বাড়ির দিকে যাচ্ছে আর ভাবছে, এতোটুকু মুরগি ! আর সে ডিম পাড়ে কত বড় বড় ! কিন্তু কীভাবে সম্ভব। এই গোপন রহস্য এখন বাড়িতেই গিয়ে মুরগি হাতে নিয়ে দেখতে হবে। এ সব কথা ভেবে ফজুর মনে কিছু সৃষ্টির আকাঙ্খা হল। মায়ের কাছে কেনা ডিম দিয়ে ঘরে থাকা একটা খাঁচায় ভাত দিয়ে উঠোনে ডিম পাড়া মুরগিদেরকে ডাকছে।
    মা বলছেন, মুরগি ধরে কি করবি? গতকাল না এক মোরগ জবাই করে তার মাংস রান্না করে খাওয়ালাম।
    ফজু চুপ, আপন মনে মুরগিদেরকে ডাকছে। নাহ ! মুরগিরা খাঁচায় ধরা দিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ঘরের বেড়ায় আঁটকানো রাখা বরঁশিতে কেঁচো দিয়ে উঠোনে ফেলে রাখে । ব্যাস, মুরগি তা খেয়ে ফেলে। ফজু খুশিতে তা ধরে টেনে বরঁশি বের করতে চেষ্টা করে। চেষ্টায় সফল হল ঠিকই কিন্তু ততক্ষনে মুরগি আর নেই। মরা মুরগি হাতে নিয়ে বলছে, এই মুরগি এখন ডিম বের কর। আমি দেখবো কেমন করে অতবড় ডিম বের হয়।
    রান্না ঘর থেকে মা এসে ফজুকে একটা থাফড় মেরে বলল, এ তুই কি করলি? ডিম পাড়া মুরগিটাকে এমন ভাবে মারলি? খাড়া তোর ডিম নিয়ে গবেষণা দেখাচ্ছি।
    মায়ের হাতে দাদার হাঁটার ষ্টিলের লাঁঠি। মরা মুরগি ফেলে ফজু এক দৌড়ে বাড়ির দক্ষিণ দিকে পুকুর পাড়ে গিয়ে বসে ভাবে, মুরগিটা মারা গেল কেন? কোন সমাধান পেলো না। দুপুর হয়ে গেছে। লাঁঠির ভয়ে ফজু খেতেও যায়নি বাড়িতে। পেটটা ক্ষূধায় চোঁ চোঁ করছে।
    ফজুর মা বাবা দুপুরে খাওয়ার পর একটু ঘূমায়, তখন রান্না ঘরে কেউ যায় না। এই সময়টাকে কাজে লাগাতে হবে। ফজু নিজের ভাবনা মত এগিয়ে চলছে। মায়ের ঘরে দরজাটা অর্ধেক খোঁলা আছে। বারান্দায় একটা চেয়ার ও তার কাছে বাবার এক জোড়া জুতো আছে। মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ আগে বাবা চেয়ার থেকে উঠে জুতো খূঁলে ঘরে গেছেন।
    ফজুর চোখ ঘরের দিকে তাঁকানো কিন্তু পাদ্বয় রান্না ঘরের দিকে যাচ্ছে। হঠাৎ রান্না ঘরের সামনের এক বদনার সাথে ফজুর পায়ের টক্কর লেগে বদনার পানি পড়ে গিয়ে একটু শব্দ হয়।
    ঘর থেকে মা বলেন, কে রে? ফজু? ফজু মুহূর্তেই ঘরের আড়ালে গিয়ে দাঁড়ায়। মা আরেকবার বললেন, এই ফজু? ভাত পাতিলেই আছে, থালাও ধোয়া আছে শুধু বেড়ে খেয়ে নি। আমার শরীরটা ভালো না।
    ফজু বুঝতে পারছেনা। মা তার ছায়াও দেখেনি, তাহলে ফজু নাম কেমনে বললেন?
    তিনি মা, পৃথিবীতে আপনজনের মধ্যে প্রথমের প্রথম। ফজু আর কিছু না ভেবে কিছুটা বেশী সাহস নিয়ে ঘরে ঢুকে খেতে থাকে। শব্দ হলেও কে কে বলে মা আর ডাকবেন না। রান্না হয়েছে ডিম। নাহ্‌ ডিম ফজু খাবেনা। যা নিয়ে গবেষণার পালায় ফেল তা খাওয়া যাবেনা। আর কি আছে ভেবে অন্য পাতিলে খূঁজতে থাকে। মুরগির তরকারি, টুকরার মধ্যে আছে দুটো পা, গলা ও গিলা(যার মধ্যে পরিপাককৃত খাদ্যের অপ্রয়োজনিয় অংশ থাকে)। গলা খাওয়া গেলেও পা ও গিলার কথা ভাবতেই কেমন যেন বমির ভাব হল ফজুর। নাহ্‌ এসব দিয়ে ফজুর খাওয়া হবে না। কিন্তু ক্ষূধার কি হবে? পেট বলছে খাবো কিন্তু মুখ ?
    সব কথা বাদ দিয়ে হঠাৎ করেই গিলা দিয়ে মাখানো দুটো ভাত ফজু মুখে পুরে দেয়। কই ! তেমন খারাপ তো লাগছে না। ফজু খাবার খাচ্ছে। খাওয়ার ফাঁকে দুই দুইটা মুরগি রান্না ঘরে গিয়েছিল খাবারের আশায়। ফজু ধরতে গিয়েও বাধার মুখে পড়ে মায়ের সেই ষ্টিলের লাঁঠির কথা মনে করে। ভাবে নাহ্‌, কোন ভাবেই মায়ের হাতে দাদার ওই ষ্টিলের লাঁঠির মার খাওয়া যাবে না। বন্ধুরা কেউ যদি শুনে তবে স্কুলে গেলে মুখ দেখানো যাবেনা। তারাতারি খেয়ে খাল থেকে কিছু মাছ ধরে নিয়ে আসি। মা তাতে খুশিই হবেন, সকালে মারা মুরগিটার কথা আর মনে রাখবেনা। কিন্তু' টেংরা ও শিং মাছেরা যে হুল ফোটায়, তাতে বিষণ ব্যাথা করে। তাহলে কি করা যায়? কি করলে মাকে শান্তনা দেওয়া যায়? এসব কথা ভাবতে ভাবতে ধ্যানে পড়ে খাওয়া শেষ না করেই।
    ও দিকে থালার ভাত সব সেই দুটো মুরগি সাবাড় করছে। মায়ের ডাকে ফজুর ধ্যান ভাঙে। দেখে থালায় ভাত নেই। পাশেই মুরগি দুটো আরামে বসে ঘূমাচ্ছে। রাগে ফজু লাঁঠি দিয়ে মুরগিদের প্রতি তাড়া করতেই দুয়ারে ফেলা পানিতে পা পিছলে পড়ে গিয়ে দরজার সাথে আঘাত খেয়ে মা গো বলে চিৎকার করে। কপালে বেয়ে রক্ত বের হয়।
    মা বললেন কি হয়েছে রে ফজু?
    না মা, কিছু না। মুরগি দুটো যন্ত্রনা করছে তো তাই।
    ফজুর পেট ভরেনি খাবারে। পাতিলেও ভাত নেই। দুঃখে ফজু নিজের গালে হাত রেখে বসে ভাবছে। আজকের দিনটাই শালার ডিম ও মুরগি নিয়ে ভেবে গোল্লায় গেল।
                                                            সমাপ্ত
                                                                                            ০৬-০৮-২০১২

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger]

sislam8405

{Facebook#https://www.facebook.com}

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

luoman থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget